ঠাকুরগাঁওয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা মাদ্রাসা ছাত্রের

ঠাকুরগাঁওয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা মাদ্রাসা ছাত্রের

জসীম উদ্দিন ইতি (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে শামীম আফজাল (১২) মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র
মাদরাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

গত বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের
ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়কের ব্র্যাক অফিসের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত
জমিরিয়া ইহ্ইয়াউল উলুম মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর আহত অবস্থায় ওই মাদরাসা ছাত্রকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে অবস্থার অবনতি হয়।
পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে
চিকিৎসক রেফার্ড করে দেন। ঘটনা আড়াল করতে মাদরাসা শিক্ষার্থী সুস্থ না
হতেই ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ না নিয়েই শিক্ষার্থীর
বাড়ীতে রেখে আসে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। মাদরাসা ছাত্র বর্তমানে নিজ বাড়ীতে
চিকিৎসাধীন।

আহত মাদরাসা ছাত্র ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কাচনা গ্রামের
সাদেক আলীর ছেলে। গেল আগস্ট মাসে ওই ছাত্রকে মাদরাসার হেফজ বিভাগে ভর্তি
করে তাঁর পরিবার।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদরাসায়
ভর্তির কয়েকদিনের মাথায় বাড়ীতে পালিয়ে গেছিল শামীম। পরবর্তীতে পুনরায়
বুঝিয়ে ঘটনার দিন দুপুরে তাঁকে মাদরাসা দিয়ে যান তাঁর বাবা সাদেক আলী ও
নানা মাওলানা নুরুল ইসলাম। বুধবার আসর নামাযের পর মাদরাসার ছাদে বাবার
সাথে মুঠোফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে একতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা
করে।

মাদরাসা ছাত্রের মা খায়রুন আক্তার জানান, ছেলেকে হাফেজ বানানোর জন্য
জমিরিয়া ইহ্ইয়াউল উলুম মাদ্রাসার সুনাম শুনে সেখানে ভর্তি করিয়েছিলাম।
হঠাৎ কি কারণে ছেলেটি আত্মহত্যার চেষ্টা করলো বুঝে উঠতে পারছি না। ঘটনার
পর থেকে শামীম অসুস্থ। সুস্থ হলে পুরো ঘটনা তাঁর মুখেই জানা যাবে।
শুক্রবার বিকালে মাদরাসা ছাত্র শামীম আফরোজের বাড়ীতে গিয়ে জানতে চাইলে
শামীম জানান, আসরের নামাযের পর ছাদে উঠেছিলাম। এরপর কিভাবে নিচে পড়ে
গেলাম বলতে পারছি না। তবে জ্ঞান ফেরার পর বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালে।
ভয়ে আর কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

ওই ছাত্রের নানা মাওলানা নুরুল ইসলাম জানান, যতদুর জানি ওই মাদরায় পড়তে
আগ্রহ ছিল না আমার নাতি শামীমের। আতহত্যার চেষ্টা কেন করলো বিষয়টি
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভালো ভাবে বলতে পারবে। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
করছি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কারণে আমার নাতি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে
দৃষ্ট্রান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

তবে অভিযোগ রয়েছে ওই মাদরাসায় ছাত্রের পড়ালেখা না পারলে কঠিন শাস্তি দেন
শিক্ষকেরা। এমন শাস্তি দেখেই ভয়ে বাড়ীতে পালিয়ে যায় শামীম। তাঁর পরিবার
পুনরায় আবার মাদরাসায় রেখে আসায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় শামীম।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জমিরিয়া ইহ্ইয়াউল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা
অধ্যক্ষ মুফতী শরিফুল ইসলাম জানান, ভর্তির পর থেকেই মাদরাসায় পড়তে শামীম
আপত্তি করছিল। কাউকে না জানিয়ে বাড়ীতে চলে গেছে সে। গত বুধবার তাঁকে
পুনরায় মাদরাসায় রেখে গেলে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে
সামান্য আহত হয়েছে। ঘটনার আগে তার বাবার সাথে মোবাইলে কথা বলছিল। এতে
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই দায়ী নয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী
আত্মহত্যা চেষ্টা ঘটনার বিষয়ে কেউ অবগত করেনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যোবায়ের হোসেন জানান,
বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে বলে বিষয়টি তদন্ত করা
হবে। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

জমিরিয়া ইহ্ইয়াউল উলুম মাদরাসা অফিস থেকে জানা গেছে, ১২০ জন এতিমখানায় সহ
মাদরাসায় মোট ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে হেফজ বিভাগে পড়ছেন
অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী।

আপনি আরও পড়তে পারেন